কুরআন ও হাদীস ইসলামী জীবন-বিধানের মূল ভিত্তি। কুরআন যেখানে জীবন-ব্যবস্থার মৌলিক নীতি পেশ করে, সেখানে হাদীস হইতে লাভ করা যায় খুটিঁনাটি বিধানের বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও কুরআনী মূলনীতি বাস্তবায়নের কার্যকর পন্হা। কুরআন ইসলামের প্রদীপ স্তম্ভ, হাদীস উহার বিচ্ছুরিত আলোর বন্যা। আলোহীন প্রদীপ যেমন অবাস্তব, হাদীসকে অগ্রাহ্য করিলে কুরআনও তেমনি অর্থহীন হইয়া যায়। কুরআনকে বলা যায় ইসলামের বিরাট বৃক্ষের মূল ও কাণ্ড; হাদীস উহার শাখা ও প্রশাখা। শাখা-প্রশাখাহীন কাণ্ড ও মূল নিষ্ফল আবর্জনা মাত্র। কুরআন যেন ইসলামের জীবন প্রসাদ রচনার পরিকল্পনাসহ ইঞ্জিনিয়ার (রাসূল) প্রেরণের নিয়ম আল্লাহর বিধান নাযিল হওয়ার প্রথম দিন হইতেই কার্যকর। কালের যে-কোন স্তরে, পরিবর্তিত অবস্থার যে-কোন পর্যায়ে মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাসাদ রচনায় ইঞ্জিনিয়ারের (রাসূলের) ব্যাখ্যা-বিশ্লষণ, বাস্তব কর্মের নির্দেশ, পরামর্শ ও উপদেশকে কখনই উপেক্ষা করা যাইতে পারে না।
ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হৃৎপিণ্ড, আর হাদীস এই হৃৎপিণ্ডের সহিত সংযুক্ত ধমনী। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে এ ধমনী প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিত ধারা প্রবাহিত করিয়া উহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় করিয়া রাখে। হাদীস একদিকে যেমন কুরআনের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে উহা পেশ করে কুরআরে বাহক বিশ্বনবীর পবিত্র জীবন-চরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁহার কথা ও কাজ, হেদায়েত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এই কারণে ইসলামী জীবিন-বিধানে কুরআন মজীদের পরে পরেই এবং কুরআনের সঙ্গে সঙ্গেই হাদীসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আল্লাহর দাসত্ব ও আনগত্য করা যেমন রাসূলের আনগত্য ও বাস্তব অনুসরণ ব্যতীত সম্ভব নয়, অনুরূপভাবে হাদীসকে বাদ দিয়া কুরআন অনুযায়ী আমল করা অসম্ভব। বস্তুর হাদীস ও হাদীস-জ্ঞান ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা ও ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে এক অমূল্য ও অপরিহার্য সম্পদ। এই পর্যায়ের প্রাথমিক আলোচনা হিসাবে এখানে আমরা হাদীসের সংজ্ঞা, পরিচয় এবং উহার প্রকার ও ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করিব।